আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ভারতে ঈদে মিলাদ-উন-নবী উদযাপনের সময় 'আই লাভ মুহাম্মদ' ব্যানার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ব্যানার নিয়ে কয়েকটি এফআইআর দায়ের এবং অনেককে গ্রেফতার করার ঘটনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা অভিযোগ করছে যে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রকাশকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এই ঘটনায় উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ দেখা গেছে।
কানপুর শহরের রাওয়াতপুর এলাকায় 'আই লাভ মুহাম্মদ' ব্যানার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ব্যানারটি নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে অন্য এক স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল, যা অন্য একটি সম্প্রদায়ের আপত্তির কারণ হয়।
পুলিশের দাবি, এফআইআর ব্যানার লেখার জন্য নয়, বরং নির্ধারিত নিয়ম ভঙ্গ করে নতুন স্থানে প্যান্ডেল স্থাপন এবং অন্য সম্প্রদায়ের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা হয়েছে।
তবে এফআইআরে বলা হয়েছে যে মুসলমানরা একটি নতুন প্রথা চালু করার চেষ্টা করছিল এবং এতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বাড়তে পারে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে, ব্যানার নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল ৪ সেপ্টেম্বর, কিন্তু এফআইআর দায়ের হয় ১০ সেপ্টেম্বর। এই বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, 'আই লাভ মুহাম্মদ' লেখা কোনো অপরাধ নয়।
কানপুরের ঘটনার প্রতিবাদে লক্ষ্ণৌতে নারীরা বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ করেছেন, যাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রাণা। তিনি অভিযোগ করেছেন যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের আটক করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বিক্ষোভ করার অনুমতি নেই।
একইভাবে, উন্নাও এবং বহরাইচ জেলাতেও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে, যার ফলে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলছে, এই বিক্ষোভগুলো ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেছে, কারণ কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
বিজেপি সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নয়।
মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন যে ছোটখাটো ঘটনাগুলোকে বড় করে তুলে মুসলিমদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারা বলছেন, মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে।
কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ী প্রশ্ন তুলেছেন, 'আই লাভ মুহাম্মদ' বলার জন্য যদি মামলা হয়, তাহলে কি ভারতের ৩০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধেই মামলা হবে? তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অনুভূতি তৈরি করছে যে তাদের প্রান্তিক করা হচ্ছে।
তবে তারা এও প্রশ্ন তুলছেন, কেন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি এফআইআর দায়ের হওয়াকে এত বড় করে দেখা হচ্ছে এবং কেন তারা মনে করছেন যে তাদের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর আঘাত আসছে। এই সামগ্রিক পরিস্থিতি ভারতে ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং নাগরিক অধিকারের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
Your Comment